ফরিদপুর প্রতিনিধি
ফরিদপুরের মধুখালীতে রাজন হত্যা মামলায় পাঁচজনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একইসঙ্গে প্রত্যেককে দুই মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড অনাদায়ে ২০ হাজার টাকা করে অর্থদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এছাড়া মামলার প্রমাণ লোপাটের দায়ে ওই পাঁচজনকে আরও সাত বছর করে কারাদণ্ড এবং একইসঙ্গে ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড অনাদায়ে আরও এক মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ দেন আদালতের বিচারক। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে এ আদেশ দেন অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ ২য় আদালতের বিচারক অশোক কুমার দত্ত। রায় ঘোষণার সময় যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত মো. আরমান হোসেন, মির্জা মাজহারুল ইসলাম মিলন, মো. মামুন শেখ ও ইলিয়াছ মৃধা আদালতে উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া অপর আসামি আছাদ শেখ পলাতক রয়েছেন। পরে পুলিশ পাহারায় আদালত থেকে তাদের কারাগারে পাঠানো হয়। এদের সবার বাড়ি জেলার মধুখালী উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে। এছাড়া মামলার অন্য আসামি মো. হাসান সিকদার ও মো. আশরাফুল শিকদারকে অভিযোগ থেকে খালাস দেওয়া হয়। মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, গত ২০১৪ সালের ২৭ মার্চ ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার রফিকুল ইসলামের ছেলে শাহ মো. রাজন (২৮) বিকেলে তার মোটরসাইকেল নিয়ে বাড়ি থেকে বের হন। রাতে বাড়ি না ফেরায় পরিবারের সদস্যরা তাকে খুঁজতে থাকেন। নিখোঁজ হওয়ার চারদিন পর রাজনের ব্যবহৃত পালসার মোটরসাইকেলটি মধুখালী উপজেলার তারাপুর শ্মশানঘাট সংলগ্ন মধুমতি নদীতে জেলেরা মাছ ধরার সময় পায়। পরে পুলিশ মামুনের বাড়িতে গিয়ে তাকে না পেয়ে বসতঘর তল্লাশি করে মামুনের ব্যবহৃত প্যান্টের পকেটে রাজনের ব্যবহৃত মোবাইল সেটটি পেয়ে কললিস্টের সূত্র ধরে আরমান হোসেনকে আটক করে। জিজ্ঞাসাবাদে আরমান স্বীকার করে রাজনকে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে মামুনের সহায়তায় কৌশলে কুড়ানিয়ার চর এলাকায় একটি বাগানে ডেকে নিয়ে আছাদ ও মামুন শেখসহ অজ্ঞাত ৫/৬ জন ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে লাশ ওই বাগানের মাটির নিচে চাপা দিয়ে রাখে। পরে পুলিশ মাটি খুঁড়ে রাজনের লাশ উদ্ধার করে। হত্যাকাণ্ডে মির্জা মাজহারুল ইসলাম মিলনসহ অন্যরা লাশ ময়নাতদন্তে বাধা দেওয়া, বিবিধ নেতিবাচক কর্মকাণ্ড ও পারিপার্শ্বিকতায় হত্যা ও লাশ গুমের ঘটনায় জড়িত থাকার প্রমাণ পায় পুলিশ। এ ঘটনায় নিহত রাজনের মা জোছনা বেগম বাদী হয়ে হত্যা মামলা দায়ের করেন। পরে আদালতে চার্জশিট দেয় পুলিশ। দীর্ঘ সাক্ষী ও শুনানি শেষে গতকাল বৃহস্পতিবার মামলার রায় ঘোষণা করেন আদালতের বিচারক। অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ ২য় আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর মো. রকিবুল ইসলাম বিশ্বাস জানান, রাজনকে ডেকে নিয়ে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে তার লাশ মাটি দিয়ে চাপা দিয়ে রাখা হয়। পরে পুলিশ হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনে। এ ঘটনায় রাজনের মা বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন। তিনি আরও জানান, দীর্ঘ সাক্ষী ও শুনানি শেষে গতকাল বৃহস্পতিবার আদালতের বিচারক রাজন হত্যা মামলায় পাঁচজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন। এর মধ্যে একজন পলাতক রয়েছেন। অন্যরা আদালতে হাজির ছিলেন।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata
